স্মৃতিশক্তিই মানুষের বড় সম্বল। এই শক্তি ছাড়া মানুষ জড় পদার্থের সমান। প্রখর স্মৃতিশক্তি ব্যক্তির উন্নয়নে কমপক্ষে ৯০% ভূমিকা রাখে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বর্তমানে অল্প বয়সীদের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ছে। শক্তিশালী স্মৃতিশক্তি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং প্রাণশক্তির উপর নির্ভর করে।
আমাদের স্মৃতিগুলি আমরা কে তার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। অনেক বয়স্ক কিংবা সদ্য হওয়া প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, স্মৃতিশক্তির হ্রাস এতটাই গুরুতর হয়ে ওঠে যে তারা আর স্বাধীনভাবে বাঁচতে সক্ষম হয় না, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেড়ে ওঠা সবচেয়ে বড় ভয়গুলির মধ্যে একটি।
Related: বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াই করার উপায়
স্মৃতিশক্তি কি এবং কিভাবে কাজ করে?
মস্তিষ্কে ধারণকৃত তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার প্রক্রিয়া কিংবা মস্তিষ্কে ধারণকৃত তথ্যকে মনে রাখাকে স্মৃতিশক্তি বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে তথ্য আহরণ করে মস্তিষ্কে জমা করা হয় এবং দরকার অনুযায়ী সেই তথ্য আবার ভান্ডার থেকে খুঁজে নিয়ে আসা হয়। বিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস এর মতে, “স্মৃতিশক্তি হচ্ছে পেশির মতো।”
অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন যে মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে এবং মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের স্মৃতিশক্তি কিভাবে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রয়োজন মতো আমাদের মনে করিয়ে দেয়। বিভিন্ন গবেষণা হতে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা করতে পেরেছেন।
আমাদের মগজের বাইরের স্তরের নীচে আছে “হিপোক্যাম্পাস” নামের অংশ। এই অংশটিই নতুন কিছু শেখার জন্যে ও স্মৃতিশক্তির জন্যে কাজ করে। গবেষকদের মতে, হিপোক্যাম্পাসের আশেপাশের কয়েকটি অংশেই নতুন তথ্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত হয়।
মস্তিষ্কের বাইরের দিকে থাকে কর্টেক্স। এটি আকারে বড় এবং এটি অসংখ্য কাজ করে থাকে। দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোর নড়াচড়া এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষ কিছু অনূভুতির জন্য মস্তিষ্কের কর্টেক্স বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া পরিচালনা করে।
স্মৃতি তৈরি করার জন্য আমাদের মস্তিষ্ক এর কর্টেক্স ওই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত কোন চিহ্ন দিয়ে তা সংকেত হিসেবে নিউরনে পাঠায় এবং নিউরনের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে। দুটি নিউরনের সংযোগস্থলকে বলা হয় সিন্যাপ্স বা সাইন্যাপ্স।
পুরনো বন্ধু চেনা,পাখির ডাক শুনে পাখি চেনা সহ বিভিন্ন অনূভুতি পেতে কাজ করে কর্টেক্স। এ ধরনের অসংখ্য অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের ছোটোবেলা থেকেই জড়ো করে কর্টেক্স। পুরনো কিছু মনে করার সময় মস্তিষ্ক এই জমাকৃত অংশ থেকে তথ্য খুজে নেয়।
স্মৃতিশক্তির সাথে জন্মগত বা জেনেটিক বিষয় জড়িত আছে, তবে আশপাশের পরিবেশেরও অনেক অবদান আছে। খুব মনোযোগের সাথে যা শেখা হয়, স্মৃতিতে তার ছাপ দৃঢ় হয়। মস্তিষ্কের কর্টেক্সে তথ্য লিপিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়াটি হয় দীর্ঘস্থায়ী, যদি বিষয়টিকে মনোযোগের সাথে হৃদয়ঙ্গম করা হয়। ফলে সহজে অনেক কিছু দীর্ঘ দিন মনে রাখা সম্ভব হয়।
স্মৃতিশক্তির ভিতকে মজবুত ও দৃঢ় করতে চোখও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইন্টারনেট ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির এই যুগে অডিও-ভিডিও সহ বিভিন্ন প্রকারের নতুন শব্দের সাথে আমাদের পরিচিতি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কানে শোনা, চোখে দেখা ও শোনার মাধ্যমে যদি মিল ঘটিয়ে কিছু শেখা যায়, তা দীর্ঘ দিন মনে থেকে যায়। চোখের সাথে মস্তিষ্কের রয়েছে সরাসরি সংযোগ। চোখ দৃশ্যমান বস্তুর ছবি ধারণ করে, ইমেজ সৃষ্টি করে, ইমেজকে বিশ্লেষণ করে ব্রেনে। প্রকৃত অর্থে বিশ্লেষণের কারণেই আমরা বস্তুটিকে দেখতে পাই।
Related: Cyberbullying: Be Aware
স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়ার কারণ
বর্তমানে অনেককেই দেখা যায় স্মৃতিশক্তির দুর্বলতায় ভুগতে। হঠাৎ কিছু একটা মনে করতে চাইলেও হয়তো মনে পড়ছে না। এ ধরনের সমস্যাকে আমরা কেউই তেমন গুরুত্ব দেই না। এই সামান্য ভুলে যাওয়া থেকে স্মৃতিবিভ্রমের মতো মারাত্মক কিছু হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্মৃতিশক্তি নষ্টের বড় কারণ হল, মানসিক স্ট্রেস কিংবা মানসিক দ্বন্দ্ব। অত্যাধিক স্ট্রেস ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিশক্তিও নষ্ট করে। মানসিক দ্বন্দ্বে থাকলে আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। এতে করে মস্তিষ্ক স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায় যার ফলে স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে।
স্মৃতিশক্তি নষ্টের আরেকটি বড় কারণ হল, বিষণ্ণতা। বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষের মস্তিষ্কের, বিশেষ করে কর্টেক্স ও নিউরনের কার্যক্ষমতা অনেক কম থাকে যা পর্যায় ক্রমে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘমেয়াদী বিষণ্ণতার কারণে অনেকের স্মৃতিশক্তি একেবারে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
ড্রাগস, ধূমপান ও মদ্যপান- এ তিনটি কার্যক্রম মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দেয়ার অনেকাংশে দায়ী। সিগারেটে থাকা নিকোটিন ও বিভিন্ন মদে মিশ্রিত এলকোহল আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং স্বাভাবিক চিন্তা করার শক্তি অতি দ্রুতই নষ্ট করে দেয়। যারা নিয়মিত ড্রাগস নেন, তাদের সাধারণ যুক্তি ও চিন্তা করার ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। যারা নিয়মিত ধূমপান ও মদপান করেন, তাদের স্মৃতিশক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়।
কম ঘুমানো এবং নিজের মানসিক আবেগ সময়মতো প্রকাশ নাহ করা স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়ার জন্যে দায়ী হয়ে থাকে। যারা যারা নিজের মনের অভ্যন্তরে কী কী ঘটে যাচ্ছে কিংবা কী কী মনের অভ্যন্তরে জমা করে রেখেছেন তা কাউকে বলেও বোঝাতে পারেন না কিংবা বোঝাতে চান নাহ, তাদের স্মৃতিশক্তি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে।
আমাদের মস্তিষ্কের উভয় অংশ সমান কাজ করলে আমরা স্বাভাবিক থাকি। একটি অংশের কার্যক্ষমতা কম হলে আমাদের মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। এতে করে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায় যা পরবর্তীতে স্মৃতিশক্তি দুর্বল করতে প্রধান ভূমিকা রাখে।
ঘুমানোর সময় আমাদের মস্তিষ্কে নতুন নিউরনের সৃষ্টি হয়, যা মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং মস্তিষ্ক ভালো রাখতে সহায়তা করে। ঘুম কম বা না হলে মস্তিষ্ক তা করতে পারে না, যার ফলে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের স্মৃতিশক্তি দিনে দিনে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে, যা পরবর্তীকালে শর্ট টার্ম মেমোরি লসের মতো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
Related: How Important is Alone Time for Mental Health
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার উপায়
নতুন কিছু শেখা এবং স্মৃতিশক্তির ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের নিজেকে নতুন রূপ দেওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা সত্য। আপনি আপনার জ্ঞানীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, নতুন তথ্য শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং যে কোনও বয়সে আপনার স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে নিম্নোল্লিখিত পরামর্শগুলো গ্রহণ করতে পারেন।
মেডিটেশন অথবা ধ্যানমগ্ন হওয়া
আমাদের মস্তিষ্কের ছোট একটি অংশ সবসময় তৈরি থাকে মনে রাখার মত কিছু হলেই সেটিকে ধরে ফেলতে। মস্তিষ্কের এই ছোট অংশের কাজ হচ্ছে মনে রাখার মত কোন ঘটনা পেলেই সেটিকে মস্তিষ্কে সংরক্ষণ করা এবং কিছু সময়ের জন্য জমিয়ে রাখা।
মেডিটেশন কিংবা ধ্যান মস্তিষ্কের এই ছোট অংশের কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে মস্তিষ্ককে দ্রুত কাজ করতে এবং এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মেডিটেশন কিংবা ধ্যান মানুষের মনে রাখার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা পাশাপাশি মানুষের মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
মেডিটেশন কিংবা ধ্যান এর ফলে আমাদের মনের অভ্যন্তরে বিদ্যমান চিন্তা ও চাপ অনেকটাই কমে যায়। ফলে, কোনও কিছু মনে রাখার বা মনে করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়না। মেডিটেশন কিংবা ধ্যান প্রচুর আরামদায়ক এবং প্রশান্তিমূলক যা ধীরে ধীরে দেহের অভ্যন্তরে এবং বাহিরে বিদ্যমান স্ট্রেস এবং ব্যাথা দূরীভূত করে, রক্তচাপ কম করে এবং পাশাপাশি মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
প্রকৃতপক্ষে, মেডিটেশন কিংবা ধ্যান মস্তিষ্কে বিদ্যমান ধূসর পদার্থ বৃদ্ধি করতে দেখা যায়। ধূসর পদার্থে নিউরন কোষ আছে। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধূসর পদার্থ হ্রাস পায়, যা স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
মেডিটেশন কিংবা ধ্যান এর কৌশলগুলি এমনভাবে সাজানো হয় যাতে সব বয়সের মানুষ তাদের স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে খুবই সহজ ভাবে ব্যবহার করতে পারেন। মেডিটেশন কিংবা ধ্যান এর একটি সহজ উপায় হলো মাইন্ড প্যালেস কৌশল।
মাইন্ড প্যালেস কৌশল টি প্রায়শই বিভিন্ন চ্যাম্পিয়নদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। এই প্রাচীন কৌশলে, আপনি স্মৃতির একটি সেট সংরক্ষণ করার জন্য মস্তিষ্কের ভিতরে একটি চাক্ষুষ এবং জটিল জায়গা তৈরি করেন যা দেখতে অনেকটা কোনো রাজপ্রাসাদ এর মতো। এই প্রাসাদের বিভিন্ন ঘরে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করা হয় এবং সময়মতো কক্ষের দরজা খোলা মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে নেওয়া হয়।
শারীরীক ব্যায়াম করা
আমরা সবাই জানি যে, ব্রেনের মধ্যে থাকা হিপোক্যাম্পাস মস্তিষ্কের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং স্মৃতি লিপিবদ্ধ করতে কাজ করে। বৈজ্ঞানিক মতে, শারীরীক ব্যায়াম দেহের সাথে সাথে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি এর উদঘাটন করে এবং মগজে নতুন কোষের জন্ম দিতে সহায়তা করে। ব্যায়াম করার ফলে এই হিপোক্যাম্পাস উত্তেজিত ও স্ফীত হয়ে উঠে এবং স্মৃতি ধরে রাখতে সহায়তা করে।
আবার প্রতিনিয়ত কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম করলে মস্তিস্কে নিয়মিত অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয়, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শারীরীক ব্যায়াম দেহের পেশির সাথে সাথে মস্তিষ্কের আকারও বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্ক বিদ্যমান নিউরন এবং সিন্যাপসের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মগজে নতুন নতুন কোষ তৈরি হয়।
কয়েকজন গবেষকদের মতে, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কের স্থান সংক্রান্ত স্মৃতি ধরে রাখতে সহায়তা করে। সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা প্রমাণ করেছে যে এটি মস্তিষ্কের জন্য উপকারী এবং শিশু থেকে বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত সমস্ত বয়সের মানুষের স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।
এমনকি অল্প সময়ের জন্য করা মাঝারি ব্যায়াম দ্বারা সব বয়স জুড়ে স্মৃতি সহ অন্যান্য জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা উন্নত করতে দেখা যায়।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে শারীরীক ব্যায়াম নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রোটিনের নিঃসৃতি বৃদ্ধি করতে পারে এবং নিউরনের বৃদ্ধি এবং বিকাশ উন্নত করতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত হতে পারে। মধ্যজীবনে নিয়মিত শারীরীক ব্যায়াম পরবর্তী জীবনে স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার ঝুঁকি হ্রাসের সাথেও যুক্ত।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
সঠিক ঘুমের অভাব দুর্বল স্মৃতিশক্তির অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ঘুম অত্যন্ত কার্যকরী। রোজ রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা মস্তিস্কের সক্রিয়তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়ম মেনে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার ঘুম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ঘুম স্মৃতি একীভূতকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেখানে স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। গবেষণা দেখায় যে পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হওয়া স্মৃতিশক্তির উপর নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলে।
সূর্যের কিরণ যখন আপনার বন্ধ চোখের পাতা ভেদ করে ঢুকে পড়ে, তখন সেটা মস্তিষ্ককে কর্টিসল হরমোন ছড়িয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করে।রাতে ৬ ঘন্টার কম ঘুম মস্তিষ্কের বয়স ৭ বছর বাড়িয়ে দেয়। ঘুম মস্তিষ্কের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি কাজ। সারারাত ঘুমানোর সময় মস্তিষ্কের কোষগুলো মগজে বিদ্যমান ক্ষতিকর পদার্থ গুলোকে মগজ থেকে সরিয়র দেয়। এর ফলে স্মৃতিশক্তির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
শরীরের প্রাকৃতিক নিদ্রা চক্র ব্যাহত হলে বিভিন্ন জ্ঞানীয় দুর্বলতা হতে পারে, কারণ এটি স্মৃতি তৈরি করতে মস্তিষ্ক ব্যবহার করে এমন প্রক্রিয়াগুলিকে বাধা দেয়। একটি পূর্ণ রাতের বিশ্রাম পাওয়া, সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য রাতে প্রায় 7-9 ঘন্টা, মস্তিষ্ককে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি তৈরি এবং সংরক্ষণ করতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্ক ব্যবহারের অনুশীলন
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে মস্তিষ্ক লক্ষ লক্ষ নিউরাল পথ তৈরি করে যা দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়া করতে এবং স্মরণ করতে, পরিচিত সমস্যাগুলি সমাধান করতে এবং ন্যূনতম মানসিক প্রচেষ্টার সাথে অভ্যাসগত কাজগুলি কার্যকর করতে সহায়তা করে। কিন্তু যদি সবসময় এই সুপরিচিত পথগুলি ব্যবহার করা হয়, তবে মস্তিষ্ক ক্রমবর্ধমান এবং বিকাশ শীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা এর অভাব অনূভুত করে।
বাঁধাধরা জাগতিক জীবন থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার বা শেখার চেষ্টা করা কিংবা নতুন কোনো কাজ করার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ করলে মগজের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। ছবি আঁকা, গান করা, কোন যন্ত্রাংশ বাজানো কিংবা বিদেশি ভাষা শিখার চেষ্টা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
স্মার্ট ফোনের স্মার্ট গেম ছেড়ে নিয়মিত ব্রেন গেম খেলা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দাবা একটি উপকারী অনুশীলন। পেপার বা মোবাইলে ক্রসওয়ার্ড সমাধান করলেও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। একটি গবেষণায় জানা গেছে, মস্তিষ্কের রোগ ডিম্যানশিয়ার থেকে রক্ষা করে এই ধরনের গেমগুলি।
মস্তিষ্কের গেম খেলে আপনার জ্ঞানীয় দক্ষতা প্রয়োগ করা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর একটি মজাদার এবং কার্যকর উপায়। ক্রসওয়ার্ড, ওয়ার্ড-রিকল গেম, টেট্রিস এবং এমনকি মেমরি প্রশিক্ষণের জন্য উৎসর্গীকৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলি স্মৃতিশক্তি কে শক্তিশালী করার দুর্দান্ত উপায়।
বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে প্রমাণ করেছে যে, যে গানের সুর ভাল লাগে সেই ধরনের গান শুনুলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। তাই কিছু সময়ের জন্য গানে সময় অতিবাহিত করা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্যে অনেক ভালো একটি উপায়। এই সময়ে মস্তিষ্কে আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। এই আন্দোলনের ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে ভাল লাগার সৃষ্টি হয়। ফলে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
শেষ কথা
স্মৃতিশক্তির বৃদ্ধির সাথে মানুষের আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার এক গভীর সম্পর্ক আছে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ব্যাপারে করতে আপনি নিজেকে সহায়তা করতে পারবেন যদি আপনি আপনার আবেগের উপর, আপনার আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হন।
মানুষের সব কাজের উৎস তাঁর মস্তিষ্ক,তাই মস্তিষ্কের সাথে মানুষের আবেগ দ্বারা প্রভাবিত আচরণের’ বিষয়টি অন্যতম। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা কি? কিংবা কিভাবে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার আপনাকে জীবনে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে? কিভাবে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার যথাযথ প্রকাশ আপনার জীবন থেকে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মত জটিল বিষয়কে দূরে রাখতে সহায়তা করে জানতে চাইলে এখনি নিজেকে ইনরোল করে ফেলুন আমাদের “Emotional Intelligence” কোর্সটিতে।
এই কোর্সটি আপনাকে শুধু স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি সহায়তা করবে এমন না, বরং এই কোর্স করার মাধ্যমে আপনি কিভাবে নিবে নিজের আবেগ এর উপরে নিয়ন্ত্রণ করবেন কিংবা কিভাবে নিজের আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাকে শাণিত করবেন তার সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
তাহলে আর দেরী কেন?? অতি দ্রুত রেজিস্টার করে ফেলুন “Emotional Intelligence” কোর্সে এবং একবিংশ শতাব্দীতে বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখুন। সবসময় মনে রাখবেন স্মৃতিশক্তির বৃদ্ধি হওয়া কিংবা স্মৃতিশক্তির হ্রাস হওয়া উভয়ই জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। কোর্সে কী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সে সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য এবং কোর্সে নাম লেখাতে নীচের বাটনে ক্লিক করুন এখনই।